• বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনে যুদ্ধ-বিরতির প্রহসন গণহত্যা চলমান, লাখো মানুষ অনাহারে, পশ্চিম তীরে নতুন হুমকি

ফিলিস্তিনে যুদ্ধ-বিরতির প্রহসন গণহত্যা চলমান, লাখো মানুষ অনাহারে, পশ্চিম তীরে নতুন হুমকি

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

২৯ অক্টোবর’২৫ শান্তির ভেকধারী ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গাজায় এখন যুদ্ধ বিরতি  চলছে। জাতিসংঘের ৮০-তম সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবটি জোরালোভাবে আসে। এই সময় সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন-ফ্রান্স-অষ্ট্রেলিয়াসহ ৬টি দেশ শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৫৩টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে খুনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ১৪ বারের মতো ভেটো দেয়। ফলে ফিলিস্তিনে গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকের চেহারা বিশ্ববাসী আরেকবার দেখে। মার্কিন-ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে প্রায় ৩৬টি দেশের ৫০০-এর বেশি মানবাধিকার কর্মী ত্রাণ ও ঔষধপত্র সহ ৪০টির মতো জাহাজে ‘গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ নামে গাজা অভিমূখে অভিযান পরিচালনা করে। নয়া হিটলার নেতানিয়াহুর খুনি বাহিনী সকল জাহাজ আটকে দিয়ে প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতার করে। এ সবের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে জনগণের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে গণহত্যাকারী, মানব জাতির শত্রু দানব ট্রাম্প গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফার তথাকথিত যুদ্ধ বিরতির ‘শান্তি’ প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করা, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এই প্রস্তাবে বা চুক্তিতে জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা বন্ধের কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। গণহত্যাকারী ইসরাইলি কসাইদের বিচারের কোনো প্রশ্ন তো নেই-ই, উপরন্তু ফিলিস্তিনি জনগণকে নিরস্ত্র করে তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব স্থায়ীভাবে স্থাপনের অপচেষ্টা রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ত্যাগ করলেও সর্বশেষ ধাপেও গাজা-ইসরায়েলের সীমান্তে গাজার ১৫% তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। গাজায় কতটা সাহায্য এবং পুনর্গঠন উপকরণ পাঠাবে তার সিদ্ধান্ত নেবে নেতানিয়াহু। গাজার পুনর্গঠনে কোনো ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কোনো ভূমিকা থাকবে না। বরং এই চুক্তির মাধ্যমে গাজা নিশ্চিতভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং দুটিকে একত্রীকরণের সব সমীকরণই বাতিল করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কতর্ৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নিহত যোদ্ধাদের পরিবারকে অর্থ প্রদান বন্ধ করতে হবে, স্কুলের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে হবে এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে– ইত্যাদি।

এর অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের হাত-পা বেঁধে ট্রাম্পের শান্তির বটিকা সেবনে বাধ্য করা। গণহত্যাকারী ইসরায়েলি বাহিনীর সমরাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিরোধকারীদের নিরস্ত্র করা এবং ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে আন্তর্জাতিক সংস্থার নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা। একই সাথে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছে হামাস যদি এই প্রস্তাবনা না মানে তাহলে আমেরিকা ইসরাইলের যে কোনো পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। অর্থাৎ, পুনরায় ফিলিস্তিনকে ইসরাইলি প্রত্যক্ষ আগ্রাসন ও গণহত্যার মুখে পড়তে হবে।

কার্যত, তথাকথিত যুদ্ধ-বিরতির পরও ইসরাইলি হত্যা চলমান রয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের অপর আবাসভূমি পশ্চিম তীর দখলেরও একটি প্রস্তাব ইসরাইলি পার্লামেন্ট পাশ করেছে। যদিও পরিস্থিতির চাপে সে প্রস্তাব এখন স্থগিত রয়েছে, কিন্তু ইসরাইলি দখলদারিত্ব যে কোনক্রমেই কমবে না, বরং সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন গ্রাস না করা পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত দেবে না তারই প্রমাণ তারা রাখছে। আর বলাই বাহুল্য, মাঝে মাঝে পিতৃসুলভ কিছু ধমক-ধামক সত্ত্বেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইসরাইলকে মদদ দিয়েই চলবে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলই হলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে হিংস্র ও বিশ্বস্ত পালিত কুকুর।  

হামাস ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব মেনে নিলেও কিছু বিষয় পর্যালোচনার দাবি রেখেছিলÑ ফিলিস্তিনি জনগণ দ্বারা সরকার গঠন এবং আরব বিশ্বের নেতাদের সমর্থনের বিষয়টি। কিন্তু আরব নেতাদের ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদীদের চাপে যুদ্ধক্লান্ত হামাস দম নিতে এবং গাজাবাসীদের গণহত্যার বর্বরতা থেকে রক্ষার্থে তথকাথিত শান্তি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও হামাস বলেছে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে হামাস এ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কী তা স্পষ্ট নয়। অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপগুলোও এই প্রস্তাবের পেক্ষিতে কৌশলী বক্তব্য রেখেছে বলে জানা যায়। বাস্তবে হামাসের ধর্মবাদী মতাদর্শের থেকে উদ্ভূত তাদের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ভুল সামরিক নীতি তাদেরকে বৃহৎ জনগণের ঐক্য থেকে দূরে রেখেছে এবং সামরিক ক্ষেত্রে তাদের পরাজয়কে গভীর করেছে। এর থেকে তারা ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কীভাবে বেরিয়ে আসে তা আগামীতে দেখার। আরব বিশ্বের নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যে সম্মত হয়েছে তাকে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তথাকথিত মুসলিম উম্মাহ এক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখেনি। বিশেষত সৌদি আরব, মিসর, জর্দানÑ এরা মার্কিন প্রকল্পকেই সমর্থন করে গেছে। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কখনোই নেয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন-রাশিয়া আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিলেও মার্কিন-ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য অবরোধও দেয়নি। একেই বলে চোরে চোরে মাশতুত ভাই। তারা বরং মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তি’ প্রস্তাবকেই মেনে নিয়েছে তাদের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার স্বার্থে। সুতরং সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনায় ক্ষণিকের যুদ্ধ বিরতি হলেও ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির কোনোই সম্ভাবনা নেই। তাই সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত, ধর্ম নিরপেক্ষ, অখন্ড, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের সত্যিকার মুক্তির জন্য মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যার লক্ষ্য হবে সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম। যতদিন তা না হবে, তত দিন ফিলিস্তিন ইসরায়েলের দখল-মুক্ত হবে না, সাম্রাজ্যবাদের থেকে মুক্ত হবে না এবং একটি প্রকৃত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না।  

–২৪-১০-’২৫

ফিলিস্তিনে যুদ্ধ-বিরতির প্রহসন গণহত্যা চলমান, লাখো মানুষ অনাহারে, পশ্চিম তীরে নতুন হুমকি

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

২৯ অক্টোবর’২৫ শান্তির ভেকধারী ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গাজায় এখন যুদ্ধ বিরতি  চলছে। জাতিসংঘের ৮০-তম সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবটি জোরালোভাবে আসে। এই সময় সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন-ফ্রান্স-অষ্ট্রেলিয়াসহ ৬টি দেশ শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৫৩টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে খুনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ১৪ বারের মতো ভেটো দেয়। ফলে ফিলিস্তিনে গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকের চেহারা বিশ্ববাসী আরেকবার দেখে। মার্কিন-ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে প্রায় ৩৬টি দেশের ৫০০-এর বেশি মানবাধিকার কর্মী ত্রাণ ও ঔষধপত্র সহ ৪০টির মতো জাহাজে ‘গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ নামে গাজা অভিমূখে অভিযান পরিচালনা করে। নয়া হিটলার নেতানিয়াহুর খুনি বাহিনী সকল জাহাজ আটকে দিয়ে প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতার করে। এ সবের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে জনগণের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে গণহত্যাকারী, মানব জাতির শত্রু দানব ট্রাম্প গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফার তথাকথিত যুদ্ধ বিরতির ‘শান্তি’ প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করা, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, গাজা থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এই প্রস্তাবে বা চুক্তিতে জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা বন্ধের কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। গণহত্যাকারী ইসরাইলি কসাইদের বিচারের কোনো প্রশ্ন তো নেই-ই, উপরন্তু ফিলিস্তিনি জনগণকে নিরস্ত্র করে তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব স্থায়ীভাবে স্থাপনের অপচেষ্টা রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ত্যাগ করলেও সর্বশেষ ধাপেও গাজা-ইসরায়েলের সীমান্তে গাজার ১৫% তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। গাজায় কতটা সাহায্য এবং পুনর্গঠন উপকরণ পাঠাবে তার সিদ্ধান্ত নেবে নেতানিয়াহু। গাজার পুনর্গঠনে কোনো ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কোনো ভূমিকা থাকবে না। বরং এই চুক্তির মাধ্যমে গাজা নিশ্চিতভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং দুটিকে একত্রীকরণের সব সমীকরণই বাতিল করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কতর্ৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নিহত যোদ্ধাদের পরিবারকে অর্থ প্রদান বন্ধ করতে হবে, স্কুলের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে হবে এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে– ইত্যাদি।

এর অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের হাত-পা বেঁধে ট্রাম্পের শান্তির বটিকা সেবনে বাধ্য করা। গণহত্যাকারী ইসরায়েলি বাহিনীর সমরাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিরোধকারীদের নিরস্ত্র করা এবং ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে আন্তর্জাতিক সংস্থার নামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা। একই সাথে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছে হামাস যদি এই প্রস্তাবনা না মানে তাহলে আমেরিকা ইসরাইলের যে কোনো পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। অর্থাৎ, পুনরায় ফিলিস্তিনকে ইসরাইলি প্রত্যক্ষ আগ্রাসন ও গণহত্যার মুখে পড়তে হবে।

কার্যত, তথাকথিত যুদ্ধ-বিরতির পরও ইসরাইলি হত্যা চলমান রয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের অপর আবাসভূমি পশ্চিম তীর দখলেরও একটি প্রস্তাব ইসরাইলি পার্লামেন্ট পাশ করেছে। যদিও পরিস্থিতির চাপে সে প্রস্তাব এখন স্থগিত রয়েছে, কিন্তু ইসরাইলি দখলদারিত্ব যে কোনক্রমেই কমবে না, বরং সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন গ্রাস না করা পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত দেবে না তারই প্রমাণ তারা রাখছে। আর বলাই বাহুল্য, মাঝে মাঝে পিতৃসুলভ কিছু ধমক-ধামক সত্ত্বেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইসরাইলকে মদদ দিয়েই চলবে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলই হলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে হিংস্র ও বিশ্বস্ত পালিত কুকুর।  

হামাস ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব মেনে নিলেও কিছু বিষয় পর্যালোচনার দাবি রেখেছিলÑ ফিলিস্তিনি জনগণ দ্বারা সরকার গঠন এবং আরব বিশ্বের নেতাদের সমর্থনের বিষয়টি। কিন্তু আরব নেতাদের ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদীদের চাপে যুদ্ধক্লান্ত হামাস দম নিতে এবং গাজাবাসীদের গণহত্যার বর্বরতা থেকে রক্ষার্থে তথকাথিত শান্তি চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও হামাস বলেছে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে হামাস এ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কী তা স্পষ্ট নয়। অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপগুলোও এই প্রস্তাবের পেক্ষিতে কৌশলী বক্তব্য রেখেছে বলে জানা যায়। বাস্তবে হামাসের ধর্মবাদী মতাদর্শের থেকে উদ্ভূত তাদের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ভুল সামরিক নীতি তাদেরকে বৃহৎ জনগণের ঐক্য থেকে দূরে রেখেছে এবং সামরিক ক্ষেত্রে তাদের পরাজয়কে গভীর করেছে। এর থেকে তারা ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কীভাবে বেরিয়ে আসে তা আগামীতে দেখার। আরব বিশ্বের নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যে সম্মত হয়েছে তাকে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তথাকথিত মুসলিম উম্মাহ এক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখেনি। বিশেষত সৌদি আরব, মিসর, জর্দানÑ এরা মার্কিন প্রকল্পকেই সমর্থন করে গেছে। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কখনোই নেয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন-রাশিয়া আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিলেও মার্কিন-ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি বাণিজ্য অবরোধও দেয়নি। একেই বলে চোরে চোরে মাশতুত ভাই। তারা বরং মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তি’ প্রস্তাবকেই মেনে নিয়েছে তাদের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার স্বার্থে। সুতরং সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনায় ক্ষণিকের যুদ্ধ বিরতি হলেও ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির কোনোই সম্ভাবনা নেই। তাই সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত, ধর্ম নিরপেক্ষ, অখন্ড, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের সত্যিকার মুক্তির জন্য মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যার লক্ষ্য হবে সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম। যতদিন তা না হবে, তত দিন ফিলিস্তিন ইসরায়েলের দখল-মুক্ত হবে না, সাম্রাজ্যবাদের থেকে মুক্ত হবে না এবং একটি প্রকৃত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না।  

–২৪-১০-’২৫

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র